মাথাটা একটু ঝিমঝিম। চোখ অন্ধকার। ব্যস, তার পর জ্ঞান হারিয়ে যাচ্ছে। আধমিনিটের মধ্যেই আবার স্বাভাবিক। এক বার নয়, পর পর এমন হলে চিন্তার কারণ আছে বইকি। অতিরিক্ত ঘাম, বুকে ও শরীরের অন্যত্র ব্যথার উপসর্গ দেখা দিলে তা গ্যাসের ব্যথা ভেবে হজমের ওষুধ খেয়ে ফেলেন অনেকে। পরে অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে তখন ইসিজি, ইকোকার্ডিয়োগ্রাফি, রক্ত পরীক্ষা সব করিয়ে ধরা পড়ে, আর্টারি বা ধমনীতে ব্লকেজ রয়েছে।
হার্টে ব্লকেজ হচ্ছে কি না, তা বাড়িতে বসেও বোঝা সম্ভব। হার্টের চিকিৎসক দিলীপ কুমার এমনই জানাচ্ছেন। তাঁর মতে, সাধারণ মানুষের পক্ষে একেবারে নিখুঁত ভাবে বোঝা সম্ভব নয়। তবে যদি ৩টি লক্ষণ খেয়াল করা যায়, তা হলে রক্ত পরীক্ষা বা ইসিজি করানো অবধি অপেক্ষা করতে হবে না। আগে থেকেই সতর্ক হয়ে চিকিৎসকের কাছে যেতে পারবেন।
একজন শিশুর জন্মের সময় থেকেই তার হৃদ্যন্ত্রে কোলেস্টেরল জমা হতে শুরু করে, স্বাভাবিক নিয়মেই। এ বার বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জীবনযাপনের ধরন অনুযায়ী সেই মাত্রা কতটা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, সেটাই আসল। আর্টারির মুখ সরু হয়ে গেলে স্বাভাবিক ভাবেই তার মধ্য দিয়ে রক্ত চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হবে। হার্টে ব্লকেজ অনেক রকমের হয়। বংশগত কারণে হলে তাকে বলা হবে, ‘কনজেনিটাল হার্ট ব্লক’। তা ছাড়া হার্টের ধমনীতে রক্ত চলাচল বাধাপ্রাপ্ত বা স্তব্ধ হয়ে গেলে তাকে ‘করোনারি থ্রম্বোসিস’ বলা হবে। যদি হার্টের স্পন্দনে গোলমাল হয়, তা হলে তাকে বলা হয় অ্যারিদ্মিয়া। সে ক্ষেত্রে হৃৎস্পন্দনের হার অনিয়মিত হয়ে যায়। রক্তপ্রবাহের গতি বাধা পায়। এ ক্ষেত্রেও আবার ফার্স্ট, সেকেন্ড ও থার্ড ডিগ্রি ব্লকেজ হয়। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধরনের ব্লকের জন্য পেসমেকারও বসাতে হতে পারে।
বাড়িতে কী ভাবে বুঝবেন?
অ্যানজাইনা
বুকে চাপ চাপ ব্যথা। হাঁটাচলা, দৌড়নো, খাওয়ার সময়ে বুকে ব্যথা হতে থাকবে। এমনকি বিশ্রামের সময়েও মনে হবে, বুকে উপর ভারী পাথর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। সব সময়েই বুকের ভিতরে অস্বস্তি হতে থাকবে। শুয়েও চিনচিনে ব্যথা হতে থাকবে বুকে। আসলে ধমনী সরু হয়ে গেলে তার মধ্যে দিয়ে অক্সিজেন-সমৃদ্ধ রক্ত চলাচল বাধা পায়। তখনই ব্যথা শুরু হয়। একে বলে অ্যানজাইনা।
চোয়ালে ব্যথা
বুকে ছাড়াও চোয়ালে, বাঁ হাতে ও গলার কাছে ব্যথা শুরু হবে। সেই সঙ্গে কাঁধ ও ঘাড়ের নীচের অংশেও যন্ত্রণা হবে। হাত বা কাঁধে ব্যথা মানে অনেকেই ভেবে নেন, স্পন্ডিলাইটিসের ব্যথা। তা কিন্তু নয়। যদি দেখেন, যখন তখন চোয়ালে ও বাঁ হাতে ব্যথা হচ্ছে, পেশিতে টান ধরে যাচ্ছে, তখন সতর্ক হতে হবে। দাঁতে ব্যথা হলে যেমন যন্ত্রণা হয়, তেমন ভাবেই চোয়ালে ব্যথা হতে থাকবে। সঙ্গে শ্বাস নিতেও সমস্যা হবে। এই লক্ষণ দেখলেই সতর্ক হতে হবে।
শ্বাসকষ্ট, ক্লান্তি
শারীরিক পরিশ্রম না হওয়া সত্ত্বেও যদি শ্বাসকষ্ট হতে থাকে তা হলে বুঝতে হবে, হার্ট ভাল নেই। লক্ষণ চেনার সবচেয়ে সহজ একটি উপায় আছে। দেখবেন, বিশ্রাম নেওয়ার সময়েও শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। অনেক ক্ষণ এক জায়গায় বসে রয়েছেন, তার পরেও শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, প্রচণ্ড ক্লান্তি বোধ হচ্ছে। মনে হবে, গোটা শরীরই ঝিমিয়ে পড়ছে। তখন দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
